Tuesday, July 30, 2024

পরিচয়হীন জনপদ

 

নিজ দেশ সম্পর্কে জানার আগ্রহ আমার বরাবরই ছিল সেই সাথে ঘুরে বেড়ানোটা আমার নেশার মতন সময় পেলেই বা ফাক ফোকর পেলেই বেড়িয়ে পড়ি অজানাকে জানার জন্য শুধু যে অজানাকেই জানতে বের হই এমনটা নয় অনেক সময় জানা জিনিসটাকে আরো একটু ভালো করে দেখবার জন্যও বেড়িয়ে পড়ি এবারে বেড়িয়ে পড়ার গল্প শুরু করা যাক এ গল্পের ইতিহাস কয়েকশ বছরের পুরোনো বাংলা তখন মোগল ও ব্রিটিশ আমলের রাজা ও জমিদারদের দখলে ছিলতখনকার রাজা/জমিদাররা দাবা এবং পাশা খেলায় অভ্যস্ত ছিল সেই পাশা খেলার অদ্ভুত এক নিয়ম তখন প্রচলিত ছিল পাশার দানে তালুক/মৌজা রেখে খেলতে হতো যিনি জিতে যেতেন তিনিই সেই জমির মালিক তিনি হতেন আর এভাবেই রাজা/জমিদারদের রাজ্য বিস্তার চলতো একদিকে রাজ্য বিস্তার অন্যদিকে রাজ্য খোয়ানোর কাজটা খুব ভালো করেই চলতে থাকে আর এভাবেই কিছু কিছু মৌজা বা জমির মালিকানা অন্যদের হাতে চলে যেতে থাকে কখনো সেটা কয়েক একর থেকে শুরু করে কয়েকশ পর্যন্ত হতো মোঘল আমল ও ব্রিটিশ আমল শেষ হলেও সেই সব অঞ্চল এর দায়দায়িত্ব থেকে যায় অধিকৃত রাজা/জমিদারদের হাতে একসময় জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়ে ব্রিটিশ ও এ দেশ থেকে চলে যায় জন্ম নেয় প্রথমে দুটি দেশ ভারত ও পাকিস্তান এর পরে বাংলাদেশ কিন্তু জমিদারদের অধিকৃত বা বাজিতে জিতে যাওয়া মৌজা বা তালুকের দখল কোন পক্ষের কাছেই যায়না এটা হয়ে পড়ে পরিচয়হীন একটা ভুখন্ড যার একটা শাসন কর্তা ছিল কিন্তু দেশ ভাগের পর সেই শাসনকৃত অংশে আর তাদের শাসন এর বিস্তৃতি থাকেনা কেননা তাদের অধিকৃত ভুখন্ডে আসতে অন্য দেশের উপর দিয়ে আসতে হয় এভাবেই সেই ভুখন্ডের দখল দারিত্ব তাদের হাত থেকে ফসকে যেতে থাকে অন্য একটি দেশের উপর জন্ম তাদের সংস্কৃতি তাদের অর্থ ও কর্মসংস্থান কোনটাই তৈরী করা যায়নি আর এভাবেই তাদের দুদর্শা চলতে থাকে তারা মানুষের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে থাকেনকিন্তু সেই সব অধিকৃত জায়গা থেকে যায় মালিকানার বাহিরে এভাবেই জন্ম নেয় ছিটমহল  দেশের বাইরে অন্যদেশের জমি সীমানা প্রাচীর না থাকলেও দখলে থাকে অন্য দেশের এমন টাই হয়েছে দাসিয়াছড়া দহগ্রাম ও অন্যান্য ছিটমহলের ক্ষেত্রে ছিটমহলবাসী যারা আছেন তারা একটা ভুখন্ড পেলেও সেই ভুখন্ডের স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারেননা সেই সাথে দেশের কোন নাগরিক সেবাও তারা পাননা  এই ভুখন্ড এর মালিক অন্য একটি দেশ কিন্তু সেই দেশের পরিবেশ অর্থনীতি সংস্কৃতি সব কিছুই ভিন্ন ভিন্ন এই দুই সংস্কৃতির মাঝে তাদের জীবন ভাবতেই কেমন জানি লাগে এদের শোষন এবং বঞ্চনার ইতিহাস অনেক দীর্ঘ সেই ইতিহাসের আছে শুধু বঞ্চনার গল্প এই বিশেষ অঞ্চলের মানুষের আত্নীয়তা নিজের মধ্যে বিস্তার সব চলতে থাকে শুধু বিশ্বাসের উপর এদের অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের বেশী ভাগ স্বজনরা এ দেশে নেই আবার অনেকে জানেনই না কোনদিন বা কোন সময় তারা এ দেশ ত্যাগ করে চলে গেছে  তা কেউ বলতে পারেনা

0 comments:

Post a Comment

thank you for your comments