একদিন কাক ডাকা ভোরে রাতের আড্ডা শেষ করে বাড়ি ফিরছিলাম। আমার বাসা নদী এলাকায় । বাড়ির চারদিকে নদী। সেই নদীতে এক সময় বড় বড় মাছ থাকলেও এখন আর তা নেই এ নিয়ে আসলে ভাবনার ও কিছু নেই, মানুষ যে হারে মাছ আহরোন করে ঠিক সে পরিমান মাছ এখন নেই। প্রায় দিনই গল্প আড্ডায় রাত কাটিয়ে বাসায় ফিরি সেই নদীর ধার দিয়ে তেমন কিছু কখনোই চোখে পড়েনি। এ নদীর সাথে যে আমার জন্মের সম্পর্ক । সেদিন আড্ডা শেষ করে যখন ফিরছিলাম তখন মাঝরাত এর শেষ দিকে হবে হয়তো এটা আমার ধারণা কারন মোবাইলে পর্যাপ্ত চার্জ না থাকায় হালকা চাদের আলোয় ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে দিয়ে নদীর পাড় দিয়ে হেটে ফিরছিলাম। কোথাও তেমন কোন শব্দ নেই। সারারাত ঝিঝি পোকারা চিৎকার করে এখন ক্লান্ত সবাই বিশ্রাম করতে গেছে। শুধু বিশ্রামে নেই আমি আমি একমনে হাটছি, হঠাৎ দেখি সামনে একদল লোক তারা কি যেন নিয়ে হাটছে আমার সামনে দিয়ে। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিনা আসলে কি নিয়ে যাচ্ছে আমি দেখার চেষ্টা করতে লাগলাম। বেশ কয়েকটা লোক তাদের একেক জনের প্রস্তুতি একেক রকম। কেউ খুব আবেগে গদগদ হয়ে আচে কেউ সেই অস্পষ্ট বস্তুর ভারবহনে ক্লান্ত কিন্তু সে ভার অন্য কাউকে দেবার ইচ্ছে মতন ভাব আছে কিন্তু দিতে পারছেনা । হঠাৎ বিকট কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম। আবার ফিরে তাকাতেই কোথায় যেন সেই কান্নার শব্দ মিলিয়ে গেল। আমার সামনে যে মানুষগুলো দেখছি তারা কেমন জানি মায়া কান্নার মতন ভান করে কান্না শুরু করলো। তখনো ও আমি তাদের অনুসরন করে চলেছি। তাদের কেই একজন এবার আমাকে দেখে ফেলেছে এমনটা মনে হলো আমার তারা নিজেদের মধ্যে কি যেন বলাবলি করছিল । আবার সেই কান্নার সুর তবে এবার সেই জোরালো কন্ঠে নয়। মৃদ্যুসুরের যে কান্নায় প্রিয়জনকে শেষ বারের মত বিদায় দিতে গিয়ে যে কান্না হয় সে রকম । আমি চেষ্টা করছি তাদের ধরতে তাদের সাথে কথা বলতে আমার প্রবল আগ্রহ তাদের সেই ছোট ঝুলিতে কি এমন আছে যার জন্য এত রাতে তারা বের হয়েছে। নদী এলাকায় রাতে লাশ নিয়ে যাওয়া যে ভালো না তা নদী এলাকার সবাই জানে তবু কেন তারা এই সময়ে যাত্রা করছে এটাই আমার জানতে ইচ্ছে হচ্ছে। এর মাঝে সময় অনেক কেটে গেছে এবার আমি আরেকটু অবাক হলাম হালকা চাদের আলোয় ৫-৬ বছরের একটি ছোট বাচ্চা মাথায় ঝাকড়া চুল সেই ক্লান্ত শ্রান্ত লোকটার কোল তেকে নেমে তাদের সাথে হাটা শুরু করলো । আমি তখন ভাবলাম এরা হয়তো চোর বা অণ্য কোন শ্রেনীর মানুষ হবে। আমি দৌড়াতে থাকলাম কিন্তু যতই কাছে যাচ্ছি তারা আমার থেকে দুরে চলে যাচ্ছে। একটু তাদের কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম আপনাদের হাতে কি, তাদের মধ্যে হতে একজন অদ্ভুত ভঙ্গিতে জবাব দিল কি দেখবেন, সহ্য করতে পারবেন না । চলে যান আপনি না কেন কি এমন নিয়ে যাচ্ছেন দেখা যাবেনা, বিকট এক হাসিতে আকাশ বাতাস ভারি করে বললো লাশ মানুষের লাশ দেখবেন, কার লাশ জিঙ্গেস করতে বিরক্তি নিয়ে বললো আসেন আমি একটু সামনে গিয়ে দেখলাম একটা পরিচিত মুখ সেই ছেলেটিই তো যে কিনা দিন কয়েক আগে নদীর পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিল তাকে পাওয়া যায়নি। তখন আমি একটু ঘাবড়ে গেলাম আমি আবার জানতে চাইলাম এতো পানিতে পড়ে মারা গেছে কিন্তু আপনারা কারা? এবার আর কোন প্রশ্নের জবাব দিল না হাটতে লাগলো আমি পিছু নিলাম কোন এক ঝাটকায় আমাকে ফেলে দিয়ে চলে গেল যাবার আগে অনেক রকমের কথা বলে গেল আমার ঠিক মনে নেই । সকাল বেলা আমাকে গহীন বালু চর থেকে কেবাকারা যেন নিয়ে এসেছিল। তার কিছু দুরে সেই ছেলের লাশ পাওয়া গিয়েছিল যাকে আমি দেখতে পেয়েচিলাম সেই ছেলে…….
0 comments:
Post a Comment
thank you for your comments