আই হসপিটাল
খোন্দকার আশরাফ হোসেন
আমার চোখে কী হয়েছে ডাক্তার, কেন আজকাল
মানুষের মুখ দেখে বুঝি না
কে পথিক, কে পথের ঠিকাদার
কে নাবিক, কে জলের ঢেউ গুণে পয়সা তোলে
কার গোয়ালে কে দেয় ধুয়া, কার সাজানো বাগানে
কে তোলে অনিন্দ্য হর্ম্য, কোন্ নেপোয়
মেরে যায় কোন্ কালাচাঁদের দই
সন্ধ্যা হলে মশাদের পুচ্ছদেশ জোনাক পোকার মতো জ্বলে
দেখি বুড়ি চাঁদ বুড়িগঙ্গার ঘোলা জলে হাত ধোয়
জীবনানন্দ ট্রামের রাসত্দা ছেড়ে নৰত্রের আলোয়ান গায়ে
হেঁটে পার হচ্ছেন ফার্মগেট, ঠাঁটারিবাজার থেকে সোয়ারিঘাট
তাঁর পায়ে-পায়ে হাঁটে তৃষ্ণার কুকুর
তাঁর নাক নেই মুখ নেই
চোখ দুটো খেয়ে গেছে কাক।
আমার কী হয়েছে ডাক্তার, আজকাল মানুষের মুখে
সুখ না কি দুঃখ খেলা করে, কিছুতে বুঝি না,
নগরীর ফুটপাথে বাজার বসেছে, পুতুলের মতো রঙিন
জামা কিনছে ছাতা-হাতে অফিসফেরত মা,
চপ্পলের দরদামে ব্যসত্দ কোনো বৃদ্ধ,
একটি কিশোর চেয়ে দেখছে
ফুটনত্দ কড়াইতে জিলাপির প্যাঁচগুলো ফুলছে, ফুলছে
মাছবাজারে থলি হাতে ঘুরছে রসিক,
চালের আড়তে মূল্যতালিকা পড়ে আকাশের দিকে
দু'হাত তুলে কী যেন খোঁজে এক আধাপাকা বুড়ো_
এরা কি সবাই সুখী? সুখ কারে কয়?
আবছা হয়ে আসে সব, মনে হয় ঘুরছে সবাই
এক গোলকধাঁধার মধ্যে, ক্রমাগত, ক্রমাগত,
ওদের মধ্যে কে ক্লানত্দ পথিক, কে পথের ঠিকাদার,
কে নাবিক, কে ঢেউ গুনে পয়সা তোলে
কার গোয়ালে কে দেয় ধুয়া, কার সাজানো বাগানে
কে তোলে অনিন্দ্য হর্ম্য, কোন্ হতচ্ছাড়া নেপোয়
মেরে যায় কোন্ কালাচাঁদের দই।
আমি বুঝি না আমাকে কে বোঝাবে কেন এখনও
বাইশতলা কংক্রিটের মাথার ওপর ঝুলে থাকে চাঁদ
যেন ভাঙা রডের মাথায় কেউ ঝুলিয়ে রেখেছে
অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি। নিয়নশোভন
অ্যাভিনিউর দুইধারে চলমান আলোর মৌমাছি
গাড়ির লাল-লাল পুচ্ছগুলো জ্বলে আর নেভে
বুড়ি চাঁদ ভিখিরির শূন্য বাটি হাতে
নৰত্রের খুচরো পয়সাগুলোর দিকে চেয়ে থাকে
নিচে মানুষেরা হাসে গায়, হাসিয়া হাসিয়া
খেলিয়া যায়, তারা কেবলি কাঁদে, কাঁদিয়া কঁাঁদিয়া
ঘুমাতে যায়, পথে পথে মানুষের স্রোত,
এই কন্বস্রাবী ভিড়ে
সব মানুষের মুখ মনে হয় পাঁচ টাকার ঘষা কয়েনের মতো
_নাক নেই চোখ নেই আশা দুঃখ ভালোবাসা নেই
নাম পরিচয় মুছে গেছে,
এদের ভেতরে কী করে জানবো
কে পথিক কে পথের ঠিকাদার
কে নাবিক কে জলের ঢেউ গুনে পয়সা তোলে
কার গোয়ালে কে দেয় ধুয়া, কার সাজানো বাগানে
কে তোলে অনিন্দ্য হর্ম্য, কোন্ নেপোয়
মেরে যায় কোন্ হতভাগা কালাচাঁদের দই।
ডাক্তার, ফিরিয়ে দিন আমার পুরনো চোখ দুটো।
শিশুঘুড়ি
জহির আহমেদ
শ্যামল ছায়ায় গ্রাম অবারিত মাঠ
ফসলের সবজির স্নেহমাখা হাট
ঘুরে এসে মেখে নিয়ে বুনো ফুল ঘ্রাণ
তিতাসের তীরে গিয়ে উড়িয়েছি ঘুড়ি,
ঘুড়ি নয় আকাশে কাগজের প্রাণ
পাখি হয়ে দিনভর করে ওড়াউড়ি।
বেঁধে রেখে চলে যাই মনের সুতোয়
বোনেরা পাহারা দেয় কাজের ছুতোয়,
দুরনত্দ দিনের শেষে জ্বলে মঙ্গলবাতি
আকাশে গুনগুন শুনি যেন ভ্রমরের গান,
উড়ে উড়ে এখনও খেলে দিনের স্বাতি
নাটাইয়ে গুটাই বুকে রাতের পরাণ।
Saturday, June 23, 2018
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment
thank you for your comments